সম্পদ কাকে বলে: কোন উপাদান বা উপকরণকে যখন তার উপযোগ কে কাজে লাগিয়ে মানুষের চাহিদা এবং অভাব পূরণ করা হয় তখন তাকে সম্পদ বলে। তবে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ এবং বিজ্ঞানীরা তাদের নিজেদের মতো করে সম্পদকে বিশ্লেষণ করেছেন।
তাদের মধ্যে অধ্যাপক জিমারম্যানের মতামত হচ্ছে, – কোন পদার্থকে বোঝায় না, তবে ঐ বস্তুর মধ্যে কার্যকর শক্তি নিহিত থাকে তাকে সম্পদ বলে।
এনসাইক্লোপিডিয়া অব দ্য সোশ্যাল সায়েন্সে সম্পদের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলা হয়েছে-সম্পদ হলো মানুষের পরিবেশের সেই সমস্ত বিষয় সমূহ, যা মানুষের চাহিদা পূরণ করে ও সামাজিক উদ্দেশ্য সাধন করে বা উদ্দেশ্য সাধনে সহায়তা করে।
সম্পদের বৈশিষ্ট্য
নিম্নে এ সম্পর্কে কিছু বৈশিষ্ট্য উপস্থাপন করা হলো-
- কার্যকারিতা
- সীমিত সরবরাহ
- সুগম্যতা
- গ্রহণযোগ্যতা
- সর্বজনীন চাহিদা
- উপযোগিতা
- পরিবেশ মিত্রতা
- ক্ষয়শীলতা
- প্রয়োগ যোগ্যতা
আমরা সব কিছুকে সম্পদ বলে মনে করি না। তার কারণ হচ্ছে আমরা যখন কোন বস্তুর ব্যবহার করে আমাদের প্রয়োজন এবং মেটাতে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে ঐ বস্তুর সাহায্য প্রয়োজন হয় তখন তাকে সম্পদ বলে বিবেচনা করে থাকি। যেমনঃ স্বর্ণের গহনা সম্পদ নয়, এই স্বর্ণের গহনা যখন আমাদের চাহিদা পূরণে সাহায্য করে তখন তাকে আমরা সম্পদ বলে থাকি।
- সীমিত সরবরাহ:
যে কোন সম্পদের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সীমিত যোগান। কিন্তু কিছু কিছু সম্পদ অফুরন্ত হয়ে থাকে। তবে প্রাকৃতিক সম্পদের যোগান সীমাবদ্ধ থাকে। যেমনঃ খনিজ সম্পদ।
- সুগম্যতা:
যে কোন বস্তুকে সম্পদে পরিণত করতে হলে উন্নত পরিবহন ব্যবস্থার থাকা প্রয়োজন। ওই সম্পদ ব্যবহার ক্ষমতা হ্রাস পাবে এবং সম্পদ ব্যবহার করতে ব্যাপক অসুবিধার সম্মুখীন হতে হবে।
যেমনঃ হিমালয় অঞ্চলের প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহার করার জন্য অবশ্যই পরিবহন ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন।
- গ্রহণযোগ্যতা:
সম্পদ ব্যবহার করার পূর্বে সকল জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সম্পদের গ্রহন যোগ্যতা থাকতে হবে। নতুবা সম্পদের সঠিক ব্যবহার করা যাবে না।
- সর্বজনীন চাহিদা:
সম্পদ বলতে আমরা তাকেই বুঝি যখন সম্পদের চাহিদা ব্যাপক ভাবে সবার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। এবং মানুষের কাছে সেই সম্পদের চাহিদা, অভাব এবং প্রয়োজন হয় এবং সেগুলো পূর্ণ করে থাকে।
যেমনঃ পানি, বায়ু, প্রাকৃতিক তেল, গ্যাস ইত্যাদি।
- উপযোগিতা:
যে সকল বস্তু বা উপকরণের উপযোগিতা রয়েছে সে সকল বস্তু কে সম্পদ বলে আখ্যায়িত করা হয়। এবং সে সকল সম্পদ ব্যবহার করে মানুষের চাহিদা এবং প্রয়োজন মেটাতে পারে।
যেমনঃ খাদ্যশস্য মানুষের খাদ্য যোগান দিয়ে থাকে। সুতরাং সকল খাদ্য উপযোগিতা রয়েছে এখানে খাদ্য সম্পদ বলে আখ্যা পেয়েছে।
- পরিবেশ মিত্রতা:
সম্পদ রক্ষা করার জন্য সম্পদের পরিবেশ মিত্রতা থাকা প্রয়োজন। নতুবা দেখা যাবে প্রাকৃতিক উদ্ভিদ এবং প্রাণী জগতের সকল সম্পদ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে আর সুরক্ষিত নেই। সুতরাং মানুষের শিক্ষা প্রযুক্তি ও সচেতনতা কে কাজে লাগিয়ে মানুষের মধ্যে পরিবেশ মিত্রতা গড়ে তুলতে হবে। নতুবা প্রাকৃতিক সকল উদ্ভিদ এবং প্রাণী ধ্বংসের সম্মুখীন হবে।
- ক্ষয়শীলতা:
সম্পদের অন্যতম একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ক্ষয়শীলতা। ক্ষয়শীলতাকে বিলোপ প্রবণতা বলে থাকে। যেকোনো একটি সম্পদ যদি মানুষ ক্রমাগতভাবে ব্যবহার করতে থাকে তখন সেই সম্পদটি ক্রমশ হ্রাস পেতে থাকে।
যেমনঃ মাটির নিচ থেকে যে কোন খনিজ সম্পদ ক্রমাগতভাবে উত্তোলন করার ফলে সেই সম্পদ একসময় ক্রাশ হয়ে যায়।
- প্রয়োগ যোগ্যতা:
যে সকল বস্তু যত ভালো মানুষের চাহিদা এবং প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম সেই সকল বস্তু মানুষের কাছে ততটাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
যেমনঃ ইস্পাত এর প্রয়োগ ক্ষমতা বেশি থাকার যোগ্যতা বেশি।
সম্পদের শ্রেণীবিন্যাস:
সম্পদের শ্রেণীবিন্যাস নিম্নে উপস্থাপন করা হলো। সম্পর্কে বেশ কয়েক ভাবে শ্রেণীবিন্যাস করা হয়। এবং সেই শ্রেণীবিন্যাস গুলো উপাদানসমূহ নিম্নে আলোচনা করা হয়েছে-
- সম্পদ সৃষ্টির উপাদান অনুসারে।
- সম্পদের জৈবিক বৈশিষ্ট্য অনুসারে।
- সম্পদের স্থায়িত্ব বা ক্ষয়িষ্ণু তা অনুসারে।
- সম্পদের অসম বন্টন অনুসারে।
- সম্পদের মালিকানা অনুসারে।
- সম্পদের প্রাপ্যতা অনুসারে।
১) সম্পদ সৃষ্টির উপাদান অনুসারে
- প্রাকৃতিক সম্পদ –
যে সকল উপকরণ প্রকৃতি প্রদত্ত হয়ে থাকে এবং সেই সকল উপকরণ মানুষের অভাব মেটাতে সক্রিয়ভাবে ভূমিকা পালন করে থাকে তাকেই প্রাকৃতিক সম্পদ বলে। যেমনঃ মাটি, পানি, বায়ু, গ্যাস, গাছপালা ইত্যাদি।
- মানবিক সম্পদ-
যে সকল বস্তু বা উপকরণ প্রাকৃতিক ভাবে গড়ে উঠে না অর্থাৎ মানুষ নিজেই তৈরি করে থাকে সেই সকল উপকরণ বা বস্তুকে মানবিক সম্পদ বলে। যেমনঃ জনসমষ্টি, শ্রমিকের কর্মদক্ষত ইত্যাদি।
- সাংস্কৃতিক সম্পদ-
যে সকল উদ্ভাবনী শক্তি সমূহ সাহায্যে মানুষের নিরপেক্ষ উপাদান গুলি কে সম্পদে পরিণত করে সেই সকল সম্পর্কে সাংস্কৃতিক সম্পদ বলে। যেমনঃ কারিগরি দক্ষতা, শিক্ষা, বিজ্ঞানসম্মত কর্মদক্ষতা ইত্যাদি।
২) সম্পদের জৈবিক বৈশিষ্ট্য অনুসারে
- জৈব সম্পদ –
যে সম্পদ জীব বস্তু এবং উদ্ভিদ থেকেআহরণ করা হয় সেই সকল সম্পত্তি জৈব বস্তুর বলা হয়। যেমনঃ কয়লা থেকে যখন চুনাপাথর তৈরি করা হয় তখন ওই চুনাপাথর জৈব সম্পদ হবে।
- অজৈব সম্পদ –
যে সকল জড়বস্তুর প্রাণ নেই সেই সকল বস্তু দিয়ে যেসব তৈরি করা হয় সে সকল সম্পদ সম্পদ বলে। যেমনঃ মাটি, পানি, ধাতব, খনিজ ইত্যাদি.
৩) সম্পদের স্থায়িত্ব বা ক্ষয়িষ্ণু তা অনুসারে
- গচ্ছিত বা অপুনর্ভব সম্পদ –
যে সকল বস্তু বা উপকরণের পরিমাণ কম এবং ক্রমাগত ব্যবহারের ফলে শেষ হয়ে যায় সে সকল বস্তু বা উপকরণকে গচ্ছিত বা অপুনর্ভব সম্পদ বলে। যেমনঃ বাতিল লোহা বা ইস্পাত।
- অবাধ বা প্রবাহমান বা অক্ষয়িষ্ণু সম্পদ –
যে সকল বস্তু বা উপকরণ ব্যবহার করার ফলে নিঃশেষ হয়ে যায় না সেই সকল সম্পদকে অবাধ বা প্রবাহমান বা অক্ষয়িষ্ণু সম্পদ বলে। যেমনঃ বাতাস, পানি ইত্যাদি।
- পুনর্ভব সম্পদ বা পূরণ শীল সম্পদ –
প্রকৃতিতে এমন কিছু বস্তু বা উপকরণ রয়েছে যেগুলো প্রবাহমান ব্যবহার করার ফলে সাময়ীকভাবে কমে যায় কিন্তু নিঃশেষ হয়ে যায় না। এবং নির্দিষ্ট সময়ের পরে আবার পুনরায় তা পূরণ হয়ে যায় সে সকল সম্পর্কে পুনর্ভব সম্পদ বা পূরণ শীল সম্পদ বলে। যেমনঃ নদী বা সাগরের মাছ।
৪) সম্পদের অসম বন্টন অনুসারে
- সর্বত্র লভ্য সম্পদ –
যেসকল প্রাকৃতিক সম্পদ পৃথিবীর সর্বত্রই পাওয়া যায় সে সকল সম্পদের সর্বত্র লভ্য সম্পদ বলে। যেমনঃ বাতাস।
- সহজলভ্য সম্পদ –
যে সকল প্রাকৃতিক সম্পদ পৃথিবীর সব জায়গায় খুব সহজেই পাওয়া যায় এবং সহজে ব্যবহারযোগ্য সেইসকল সম্পর্কে সহজলভ্য সম্পদ বলে। যেমনঃ কৃষিজমি, বনভূমি ইত্যাদি।
- দুষ্প্রাপ্য সম্পদ –
পৃথিবীতে এমন কিছু সম্পদ আছে যেগুলো খুঁজে পাওয়া বেশ কঠিন হয়ে যায়। সেই সকল সম্পদ কে দুষ্প্রাপ্য সম্পদ বলে। যেমনঃ টিন একটি সম্পদ। এটি শুধুমাত্র মালয়েশিয়া ইন্দোনেশিয়া এবং বলিভিয়াতে পাওয়া যায়।
- একমাত্র লভ্য সম্পদ –
পৃথিবীতে এমন কিছু সম্পদ রয়েছে যেগুলো শুধুমাত্র একটি মাত্র স্থানে খুঁজে পাওয়া যায় সেই সকল সম্পর্কে একমাত্র লভ্য সম্পদ বলে। যেমনঃ ক্রায়োলাইট যা শুধুমাত্রগ্রীনল্যান্ডে পাওয়া যায়।
৫) সম্পদের মালিকানা অনুসারে
- ব্যক্তিগত সম্পদ –
যে সকল সম্পদ শুধুমাত্র একজন ব্যক্তির নিজস্ব সম্পদ সে সম্পর্কে ব্যক্তিগত সম্পদ বলে। যেমনঃ নিজ জমি, বাড়ি, গহনা, ইত্যাদি।
- সামাজিক সম্পদ –
যে সকল সম্পদ সমাজের অধীনস্থ থাকে এবং সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষ ব্যবহার করতে পারে সে সকল সম্পর্কে সামাজিক সম্পদ বলে। যেমনঃ হাসপাতাল, স্কুল ইত্যাদি।
- জাতীয় সম্পদ –
যে সকল সম্পদ ব্যক্তিগত নয় কিন্তু সারাদেশের বা জাতীয় পর্যায়ের সকল মানুষ ব্যবহার করতে পারে সেই সকল সম্পর্কে জাতীয় সম্পদ বলে। যেমনঃ খনিজ সম্পদ।
- সর্বজনীন সম্পদ –
কিছু কিছু সম্পদ রয়েছে যা কোনো ব্যক্তি বা জাতি বা দেশের নিজস্ব নয় কিন্তু সকল ব্যক্তিবর্গ ব্যবহার করতে পারে সে সম্পর্কে সর্বজনীন সম্পদ বলা হয়। যেমনঃ সমুদ্রের তলদেশে খনিজ সম্পদ।
৬) সম্পদের প্রাপ্যতা অনুসারে
- বিকশিত সম্পদ –
যে সকল সম্পদ শুধুমাত্র আবদ্ধ অবস্থায় নেই কিন্তু ক্রমাগত এর ব্যবহার করা হচ্ছে সেসকল সম্পদকে বিকশিত সম্পদ বলে। যেমনঃ জাপানের বিদ্যুৎ শক্তি।
- সম্ভাব্য সম্পদ –
যে সকল সম্পদের অস্তিত্ব রয়েছে এবং এর ব্যবহারযোগ্যতা থাকার শর্তেও প্রাকৃতিক অর্থনৈতিক সাংস্কৃতিক কারণে সেগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে না সে সকল সম্পদকে সম্ভাব্য সম্পদ বলে। যেমনঃ কঙ্গো গণপ্রজাতন্ত্র জলবিদ্যুৎ শক্তি।
আরো পড়ুন> জলবায়ু কাকে বলে?