ব্যাকরণ কাকে বলে: যে শাস্ত্রের সাহায্যে কোনো ভাষার বিভিন্ন উপাদানের স্বরুপ ও গঠনপ্রকৃতি নির্ণয় করে বিচার বিশ্লেষণ করা যায় এবং বিভিন্ন উপাদানের সম্পর্ক নির্ণয় ও প্রয়োগবিধি বিশেষভাবে আলোচিত হয়, তাকে ব্যাকরণ বলা হয়।
প্রত্যেক ভাষার মত বাংলা ভাষারও নিজস্ব ব্যাকরণ রয়েছে।
ভাষাবিজ্ঞানীরা বাংলা ব্যাকরণের সুনির্দিষ্ট সঙ্গা সম্পর্কে এখনো একমত হতে পারেননি। তার একেক জন ভিন্ন ভিন্ন মতামত দিয়েছেন।
ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ ব্যাকরণ প্রসঙ্গে বলেছেন:
“যে শাস্ত্র জানিলে বাঙ্গালা ভাষা শুদ্ধরুপে লিখিতে, পড়িতে ও বলিতে পারা যায় তাহার নাম বাংলা ব্যাকরণ।”
ব্যাকরণ কাকে বলে, ড. সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে,
“যে শাস্ত্রে কোনো ভাষাকে বিশ্লেষণ করিয়া তাহার স্বরুপ, প্রকৃতি ও প্রয়োগরীতি বিষদভাবে আলোচিত হয় এবং সেই ভাষার গঠনে, লিখনে ও কথোপকথনে শুদ্ধরুপে তাহার প্রয়োগ করা যায় সে শাস্ত্রকে সে ভাষার ব্যাকরণ বলে।”
ড. মুনীর চৌধুরীর মতে ব্যাকরণ:
“যে শাস্ত্রে কোন ভাষার বিভিন্ন উপাদানের প্রকৃতি ও স্বরূপের বিচার বিশ্লেষণ করা হয় এবং বিভিন্ন উপাদানের সম্পর্ক নির্ণয় ও প্রয়ােগবিধি বিশদভাবে আলােচিত হয় , তাকে ব্যাকরণ বলে ।”
ব্যাকরণের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ :
“ব্যাকরণ” একটি সংস্কৃত শব্দ এর ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হলো বিশেষভাবে বিশ্লেষণ করা। শব্দটির ব্যুৎপত্তি এইরকম বি+আ+√কৃ+অন = ব্যাকরণ।
ব্যাকরণ কে বলা হয় ভাষার সংবিধান। ভাষার ব্যাকরণ না জানলেও ভাষা ব্যবহার করা সম্ভব তবে শুদ্ধভাবে মনের ভাব প্রকাশ করতে চাইলে ব্যাকরণের নিয়ম কানুন জানা আবশ্যক। ইংরেজীতে আমরা ব্যাকরণকে বলি Grammar যার অর্থ শব্দশাস্ত্র।
ব্যাকরণের প্রকারভেদ সমূহঃ
ড. সুকুমার সেন ব্যাকরণকে তিন ভাগে ভাগ করেছেন:
১। বর্ণনামূলক ব্যাকরণ
২। তুলনামূলক ব্যাকরণ
৩। ঐতিহাসিক ব্যাকরণ
ড. সুনীতিকুমার চট্রোপাধ্যায় ব্যাকরণকে চার ভাগে ভাগ করেছেনঃ
১। বর্ণনামূলক ব্যাকরণ
২। তুলনামূলক ব্যাকরণ
৩। ঐতিহাসিক ব্যাকরণ
৪। দার্শনিক বিচারমূলক ব্যাকরণ
ব্যাকরণের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তাঃ
১ । ব্যাকরণ কোনো ভাষাকে বিশ্লেষণ করে তাহার স্বরূপ ও বৈশিষ্ট্য নিরূপণ করে থাকে। যে কোনাে ভাষার বিধি – বিধানের নিয়ামক হল ব্যাকরণ । তাই ব্যাকরণকে ‘ ভাষার সংবিধান ‘ বলা হয় ।
২। আপনার ভাষা সম্পর্কে ভালোভাবে জানা বুঝা ও অনুধাবন করার জন্য ব্যাকরণ পাঠ করা প্রয়োজন
৩। শুদ্ধ ভাষায় কথা বলতে হলে ব্যাকরণ জানা প্রয়োজন।
৪। নিজস্ব ভাষার প্রয়োগের নিয়ম নীতি জানতে হলে ব্যাকরনের জ্ঞান থাকা প্রয়োজন।
৫। ব্যাকরণ ভাষার জ্ঞানকে আরও নান্দনিক করে তোলে।
৬। ভাষাকে শুদ্ধভাবে লিখতে ও পড়তে হলে ব্যাকরণ জানা অতি প্রয়োজন।
৭। সাহিত্যরসিকদের মতে সাহিত্যের রস আস্বাদন করতে হলে পুরােপুরিভাবে সে রস গ্রহণ করতে হয়; আর ব্যাকরণ সে রস গ্রহণের সহায়ক ।
আরো পড়ুন> BDIBA