বর্তনী কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি?

বর্তনী কাকে বলে?

বর্তনী হলো এক বা একাধিক বৈদ্যুতিক উপাদানকে এমনভাবে সংযুক্ত করা যাতে তড়িৎ প্রবাহ চলতে পারে। তড়িৎ প্রবাহের সম্পূর্ণ পথকে বর্তনী বলে।

বর্তনীতে ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক উপাদানগুলো হলো:

  • উৎস: যে উপাদান থেকে তড়িৎ শক্তি সরবরাহ করা হয় তাকে উৎস বলে। উৎস হিসেবে ব্যাটারি, জেনারেটর ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়।

ব্যাটারি হলো একটি রাসায়নিক যন্ত্র যা তড়িৎ শক্তি সঞ্চয় করে। ব্যাটারি দুটি বা ততোধিক ইলেক্ট্রোডের একটি নেটওয়ার্ক যা একটি রাসায়নিক প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে তড়িৎ প্রবাহ তৈরি করে। ব্যাটারিগুলি বিভিন্ন আকারে এবং আকারে আসে, এবং বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়।

জেনারেটর হলো একটি মেশিন যা ঘূর্ণনশীল যন্ত্রের গতিশক্তিকে তড়িৎ শক্তিতে রূপান্তর করে। জেনারেটরগুলি বিভিন্ন আকারে এবং আকারে আসে, এবং বিভিন্ন উৎস থেকে শক্তি সরবরাহ করার জন্য ব্যবহৃত হয়।

  • রোধক: যে উপাদান তড়িৎ প্রবাহের পথে বাধা সৃষ্টি করে তাকে রোধক বলে। রোধক হিসেবে তার, কার্বন কয়েল ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়।

রোধক হলো এমন একটি উপাদান যা তড়িৎ প্রবাহকে সীমিত করে। রোধকগুলির বিভিন্ন মান রয়েছে, যা তাদের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে এমন তড়িৎ প্রবাহের পরিমাণ নির্ধারণ করে। রোধকগুলি বিভিন্ন আকারে এবং আকারে আসে, এবং বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়।

  • ধারক: যে উপাদান তড়িৎ শক্তি সঞ্চয় করে তাকে ধারক বলে। ধারক হিসেবে ক্যাপাসিটর ব্যবহার করা হয়।

ক্যাপাসিটর হলো এমন একটি উপাদান যা তড়িৎ শক্তি সঞ্চয় করে। ক্যাপাসিটরগুলির দুটি প্লেট থাকে যা একটি ডাইলেট্রিক দ্বারা পৃথক করা হয়। যখন ক্যাপাসিটারে একটি চার্জ প্রয়োগ করা হয়, তখন প্লেটগুলির মধ্যে একটি বৈদ্যুতিক ক্ষেত্র তৈরি হয়। এই বৈদ্যুতিক ক্ষেত্রটি তড়িৎ শক্তি সঞ্চয় করে।

  • আবেশক: যে উপাদান তড়িৎ প্রবাহের পরিবর্তনে বিভব পার্থক্য সৃষ্টি করে তাকে আবেশক বলে। আবেশক হিসেবে কয়েল ব্যবহার করা হয়।

কয়েল হলো একটি তারের একটি মোড়ানো স্ট্র্যান্ড। যখন একটি কারেন্ট কয়েলে প্রবাহিত হয়, তখন এটি একটি চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করে। এই চৌম্বক ক্ষেত্রটি কয়েলটির চারপাশে প্রসারিত হয়। যখন কারেন্টটি বন্ধ হয়ে যায়, তখন চৌম্বক ক্ষেত্রটি ভেঙে যায়। এই চৌম্বক ক্ষেত্রের পতনের কারণে, কয়েলের দুই প্রান্তের মধ্যে একটি বিভব পার্থক্য সৃষ্টি হয়।

  • বর্তনী বিভাজক: যে উপাদান তড়িৎ প্রবাহকে ভাগ করে দেয় তাকে বর্তনী বিভাজক বলে। বর্তনী বিভাজক হিসেবে রেজিস্টর, ক্যাপাসিটর, কয়েল ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়।

বর্তনী বিভাজক হলো এমন একটি উপাদান যা তড়িৎ প্রবাহকে ভাগ করে দেয়। বর্তনী বিভাজকগুলি বিভিন্ন মান রয়েছে, যা তারা ভাগ করে নেওয়া তড়িৎ প্রবাহের পরিমাণ নির্ধারণ করে। বর্তনী বিভাজকগুলি বিভিন্ন আকারে এবং আকারে আসে, এবং বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়।

  • বর্তনী নিয়ন্ত্রক: যে উপাদান তড়িৎ প্রবাহের মান নিয়ন্ত্রণ করে তাকে বর্তনী নিয়ন্ত্রক বলে। বর্তনী নিয়ন্ত্রক হিসেবে ট্রানজিস্টর, ডায়োড ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়।

বর্তনী নিয়ন্ত্রক হলো এমন একটি উপাদান যা তড়িৎ প্রবাহের মান নিয়ন্ত্রণ করে। বর্তনী নিয়ন্ত্রকগুলি বিভিন্ন মান রয়েছে, যা তারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এমন তড়িৎ প্রবাহের পরিমাণ নির্ধারণ করে। বর্তনী নিয়ন্ত্রকগুলি বিভিন্ন আকারে এবং আকারে আসে, এবং বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়।

বর্তনী কত প্রকার

বর্তনীকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়।

  • সিরিজ বর্তনী
  • প্যারালাল বর্তনী

সিরিজ বর্তনী

সিরিজ বর্তনীতে তড়িৎ উপাদানগুলো পর পর সংযুক্ত থাকে। অর্থাৎ, একটি উপাদানের এক প্রান্ত থেকে পরবর্তী উপাদানের এক প্রান্ত সংযুক্ত থাকে। সিরিজ বর্তনীতে সবগুলো উপাদানের মধ্য দিয়ে একই পরিমাণ তড়িৎ প্রবাহ প্রবাহিত হয়। সিরিজ বর্তনীর ক্ষেত্রে যেকোনো একটি উপাদান নষ্ট হলে বা বিচ্ছিন্ন হলে পুরো বর্তনী কাজ করবে না।

প্যারালাল বর্তনী

প্যারালাল বর্তনীতে তড়িৎ উপাদানগুলো এমনভাবে সংযুক্ত থাকে যে, প্রত্যেকটি উপাদানের এক প্রান্ত একটি সাধারণ বিন্দুতে এবং অন্য প্রান্ত অন্য একটি সাধারণ বিন্দুতে সংযুক্ত থাকে। প্যারালাল বর্তনীতে প্রত্যেকটি উপাদানের মধ্য দিয়ে একই ভোল্টেজ প্রয়োগ করা হয়। প্যারালাল বর্তনীর ক্ষেত্রে যেকোনো একটি উপাদান নষ্ট হলে বা বিচ্ছিন্ন হলেও পুরো বর্তনী কাজ করবে।

বর্তনীতে ব্যবহৃত গুরুত্বপূর্ণ সূত্রাবলী

  • ওহমের সূত্র: V = IR

ওহমের সূত্রটি বলে যে, একটি পরিবাহীর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত তড়িৎ প্রবাহের পরিমাণ তার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ভোল্টেজের সমানুপাতিক এবং তার রোধের বিপরীত সমানুপাতিক।

  • জোলের সূত্র: Q = I^2Rt

জোলের সূত্রটি বলে যে, একটি পরিবাহীর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত তড়িৎ প্রবাহের কারণে তাপের পরিমাণ তার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত তড়িৎ প্রবাহের বর্গের সমানুপাতিক এবং তার রোধ এবং সময়ের গুণফলের সমানুপাতিক।

  • ক্যাপাসিটরের চার্জ সূত্র: Q = CV

ক্যাপাসিটরের চার্জ সূত্রটি বলে যে, একটি ক্যাপাসিটারে সঞ্চিত চার্জ তার ধারণক্ষমতার সমানুপাতিক এবং তার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত তড়িৎ প্রবাহের সমানুপাতিক।

  • ক্যাপাসিটরের ডিসচার্জ সূত্র: Q = CV^2/(2R)

ক্যাপাসিটরের ডিসচার্জ সূত্রটি বলে যে, একটি ক্যাপাসিটর ডিসচার্জ হওয়ার সময়, তার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত তড়িৎ প্রবাহের পরিমাণ তার ধারণক্ষমতার বর্গের সমানুপাতিক এবং তার রোধের বিপরীত সমানুপাতিক।

  • কয়েলের প্রবাহ সূত্র: I = V/(Lω)

কয়েলের প্রবাহ সূত্রটি বলে যে, একটি কয়েলে প্রবাহিত তড়িৎ প্রবাহের পরিমাণ তার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ভোল্টেজের সমানুপাতিক এবং তার আবেশের গুণফলের বিপরীত সমানুপাতিক।

  • কয়েলের শক্তি সূত্র: W = 1/2LI^2

কয়েলের শক্তি সূত্রটি বলে যে, একটি কয়েলের মধ্যে সঞ্চিত শক্তি তার আবেশের গুণফল এবং তার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত তড়িৎ প্রবাহের বর্গের অর্ধেকের সমান।

বর্তনীর ব্যবহার

বর্তনী আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়। যেমন:

  • বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণ: বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণ ব্যবস্থায় বিভিন্ন ধরনের বর্তনী ব্যবহৃত হয়। যেমন, জেনারেটর থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী বর্তনী, বিদ্যুৎ গ্রাহকের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার বর্তনী ইত্যাদি।
  • ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি: ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি, যেমন টিভি, রেডিও, কম্পিউটার, মোবাইল ফোন ইত্যাদিতে বিভিন্ন ধরনের বর্তনী ব্যবহৃত হয়। যেমন, শক্তি সরবরাহকারী বর্তনী, নিয়ন্ত্রণকারী বর্তনী, তথ্য প্রক্রিয়াকারী বর্তনী ইত্যাদি।
  • যানবাহন: যানবাহন, যেমন মোটরগাড়ি, বাস, ট্রাক ইত্যাদিতে বিভিন্ন ধরনের বর্তনী ব্যবহৃত হয়। যেমন, ইঞ্জিন চালানোর বর্তনী, নিয়ন্ত্রণকারী বর্তনী, তথ্য প্রক্রিয়াকারী বর্তনী ইত্যাদি।
  • প্রকৌশল ব্যবস্থা: প্রকৌশল ব্যবস্থা, যেমন সেতু, বিল্ডিং, যন্ত্রপাতি ইত্যাদিতে বিভিন্ন ধরনের বর্তনী ব্যবহৃত হয়। যেমন, নিয়ন্ত্রণকারী বর্তনী, তথ্য প্রক্রিয়াকারী বর্তনী ইত্যাদি।
  • বিজ্ঞান ও গবেষণা: বিজ্ঞান ও গবেষণায় বিভিন্ন ধরনের বর্তনী ব্যবহৃত হয়। যেমন, পরীক্ষামূলক যন্ত্রপাতি, গবেষণামূলক সরঞ্জাম ইত্যাদি।

বর্তনী হলো বিদ্যুৎ ও ইলেকট্রনিক্সের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা। বর্তনী সম্পর্কে জানার মাধ্যমে আমরা বিদ্যুৎ ও ইলেকট্রনিক্সের বিভিন্ন বিষয় ভালোভাবে বুঝতে পারব।

উপসংহার

বর্তনী হলো বিদ্যুৎ ও ইলেকট্রনিক্সের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা। বর্তনী সম্পর্কে জানার মাধ্যমে আমরা বিদ্যুৎ ও ইলেকট্রনিক্সের বিভিন্ন বিষয় ভালোভাবে বুঝতে পারব।

বর্তনী বিভিন্ন ধরনের উপাদান এবং তাদের সংযোগের ধরণের উপর নির্ভর করে বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। বর্তনীর প্রকারভেদ নির্দিষ্ট কাজের জন্য উপযুক্ত উপাদান নির্বাচন করতে সাহায্য করে।

বর্তনী আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়। বর্তনী সম্পর্কে জানার মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন ধরনের বর্তনীর কাজ এবং ব্যবহার বুঝতে পারব।

Leave a Comment